শ্রীমদ্ভাগবতে রাধার নাম নাই কেন? তাহলে রাধা এলো কোত্থেকে? কোন কোন শাস্ত্রে রাধার নামোল্লেখ আছে?

 রাধাদ্যাঃ পূর্ণ্যা শক্তয়ঃ – শ্রুতি প্রমাণে আদ্যশক্তি রাধা। এবং রাধাই পূর্ণ শক্তি। আর শ্রীকৃষ্ণপূর্ণ শক্তিমান। রাধা-কৃষ্ণই। কৃষ্ণই রাধা। রাধায়া মাধবো দেবো মাধবে নৈব রাধিকা’ – ঋক পরিশিষ্ট বাক্য। রাধাকৃষ্ণ ঐছে সদা একই স্বরূপ। লীলারস আস্বাদিতে ধরে দুইরূপ।। রাধাকৃষ্ণাত্মিকা। আর কৃষ্ণও রাধাত্মিকা। রাধা শ্রীকৃষ্ণের প্রাণের প্রাণ। হৃদয় কন্দর। মানস সরোবর। বিধায় কৃষ্ণ যেখানেদিপ্তমান তাঁর প্রাণস্বরূপ রাধাও সেখানে বর্তমান। ভাগবতে প্রকাশ্যভাবে রাধানমোল্লেখ না থাকলেও মূলতঃ রাধাকৃষ্ণ নিয়েই ভাগবত। প্রাণ ছাড়া দেহ বিকল। অতএব রাধাই ভাগবতের প্রাণ। এবং শ্রীকৃষ্ণের প্রাণের প্রাণ। আর একটি বিষয় তা হল, শ্রীল শুকদেব গোস্বামী প্রভুপাদ পরম শ্রদ্ধা ও সম্ভ্রমভরে রাধানাম ভাগবত আলোচনায় উল্লেখ করেননি। তাই দৃশ্যভাবে ভাগবতে রাধানামাক্ষর দুটি নেই। তবে দক্ষতার সহিত কৌশলে ভাগবতে রাধার নাম প্রকাশ করেছেন। রাসলীলার বর্ণনায় আমরা দেখতে পাই কোন সৌভাগ্যশালিনী ভাগ্যবতী বিশেষ গোপী, প্রিয়তমা প্রধানা গোপীকে সাথে নিয়ে শ্রীকৃষ্ণ অন্যান্য গোপীদের অন্তরালে নিভৃতে বিবিধলীলা বিলাস করেছিলেন। তখন বুঝতে কষ্ট হয় না যে শ্রীকৃষ্ণ যাকে নিয়ে গোপনে বিহার করছেন তিনিই শ্রীকৃষ্ণবক্ষ বিলাসিনী রাস রাসেশ্বরী রাধা ঠাকুরাণী। শ্রীচৈতন্য মহাপ্রভুর রাধাবিরহ প্রসঙ্গে বৈষ্ণব কবি লিখেছেন, ‘রাধানাম জপে গোরা পরম যতনে।’ ভাগবতের ‘অনয়ারাধিতো নূনং ভগবান, এই শ্লোকের বৈষ্ণব তোষনী টীকায় শ্রীল সনাতন গোস্বামী ‘অনয়ারাধিতঃ’ বাক্যের মধ্যেই শ্রীমতি রাধাকে দর্শন করেছেন। রাধেতি নামকরণঞ্চ দর্শিতং। উত্তরকালে চৈতন্যচরিতামৃতকার শ্রীল কৃষ্ণদাস কবিরাজ জানায়েছেন- কৃষ্ণবাঞ্ছা পূর্তিরূপ করে আরাধনে। অতএব রাধিকা নাম পুরাণে বাখানে।। লীলাশুক শ্রীবিল্বমঙ্গল ঠাকুর তাঁর ‘কৃষ্ণকর্ণামৃত’ গ্রন্থের (শ্লোক ৭৬, ১০৭) দুটি পদে রাধা নামের স্পষ্ট উল্লেখ করেছেন। অন্যত্র উল্লেখ না থাকলেও ব্রজেশ্বরী রাই কিশোরী-রাধাকে লক্ষ্য করেই তা রচিত এটা নিশ্চিত। পরবর্তীতে উক্ত গ্রন্থের ‘সারঙ্গরঙ্গদা’ নাম্নী টীকা প্রদানকালে শ্রীল কবিরাজ মহাশয় রাধানামের বিস্তৃতি ঘটিয়েছেন। ব্রহ্মবৈবর্তপুরাণ এবং পদ্মপুরাণের নানাস্থানে রাধানামোল্লেখ আছে। মৎসপুরাণ (রুক্মিনী দ্বারাবত্যাং তু রাধা বৃন্দাবনে), বায়ুপুরাণ(রাধা-বিলাস- রসিকং), বিষ্ণুপুরাণে ১/৮/১৫ শ্লোক এবং বরাহপুরাণেও (তত্র রাধা সমাশ্লিষ্য) রাধাকে দেখতে পাই। এমনকি ঋকবেদেও (১/২২/৭-৮, ৮/৪৫/২৪) রাধা, রাধস, গোপী শব্দের স্পষ্ট উল্লেখ আছে। সামবেদেও শ্রীরাধার সহস্ত্র নাম আছে। তন্মধ্যে ষোড়ষনাম প্রধান। অথর্ববেদ এবং অথর্ববেদ অন্তর্গত পুরুষবোধিনী শ্রুতি(রাধা যস্যা), গোপালতাপনীশ্রুতি, গৌতমীয় তন্ত্র (রাধিকা পরদেবতা), তৈত্তরীয় উপনিষদ, রাধাতন্ত্র এবং নারদপঞ্চরাত্রেও (জগন্মাতা চ রাধিকা) রাধানাম বিধৃত আছে। এছাড়া কাব্য-সাহিত্য, নাটক, কবিতা, গীতি, পদাবলী এবং সর্বোপরি বৈষ্ণবাচার্যদের টীকা টিপ্পনীর ভিতর বহুতর রাধাপ্রসঙ্গ উত্থাপিত হয়েছে। রাধা বৈষ্ণব সাহিত্য জগতের প্রেমভক্তি সাধনার অনুপম সরণি। উত্তরের পরিসীমা না বাড়িয়ে বিরতির পূর্বে একথা বলতে পারি যে, শ্রীমদ্ভাগবতে শ্রীরাধানামের স্পষ্ট উল্লেখ না থাকলেও স্মৃতি, শ্রুতি, পুরাণাদি, পঞ্চরাত্র ইত্যাদি মহান গ্রন্থরাজীতে রাধানাম বর্ণাঢ্যভাবে বর্ণিত হয়েছে। [গ্রন্থঃ জীবন তরী চলার পথে ২১০-২১১]

0 Comment "শ্রীমদ্ভাগবতে রাধার নাম নাই কেন? তাহলে রাধা এলো কোত্থেকে? কোন কোন শাস্ত্রে রাধার নামোল্লেখ আছে?"

Post a Comment