কলিযুগে পশুবলি নিষিদ্ধ?

কলিযুগে পশুবলি নিষিদ্ধ আসুন পাঠা বলিকে না বলি জেনে লই পাঠা বলি সম্পর্কে ধর্মে কি বলা আছে 

 বৈষ্ণবগণ নিরামিষ আহার করেন। কালী দুর্গা বৈষ্ণবী। সেক্ষেত্রে পশুবলি দিয়ে কালী বা দুর্গার প্রসাদরূপে আমিষ খাওয়া হয় কী করে?
উত্তরঃ বহু শাস্ত্রে উল্লেখ আছে দুর্গা কালী আদি সকল দেবদেবী ভগবানের দাস অর্থাৎ, প্রত্যেকেই বৈষ্ণব। ব্রহ্মা বলছেন_
সৃষ্টি-স্থিতি-প্রলয়-সাধন শক্তিরেকা
ছায়েব যস্য ভুবনানি বিভর্তি দুর্গা।
ইচ্ছানুরূপমপি যস্য চেষ্টতে সা
গোবিন্দমাদিপুরুষং তমহং ভজামি॥
অর্থাৎ, "প্রাপঞ্চিক জগতের সৃষ্টি-স্থিতি-প্রলয়-সাধনকারিণী মায়াশক্তিই ভুবনপূজিতা দুর্গা; তিনি যাঁর ইচ্ছানুরূপ চেষ্টা করেন, সেই আদিপুরুষ গোবিন্দকে ভজনা করি।"
_(ব্রহ্মসংহিতা /৪৪) দেবীদুর্গাকে মহাদেব শিব বলেছেন, আরাধনানাং সর্বেষাং বিষ্ণোঃ _অর্থাৎ, সকল আরাধনার মধ্যে বিষ্ণুর আরাধনাই শ্রেষ্ঠ। (পদ্মপুরাণ) শিব শ্রীনারদ পঞ্চরাত্র গ্রন্থে প্রতিদিন কিভাবে শ্রীগোবিন্দের অর্চনা করতে হয়, তা দুর্গাদেবীকে নির্দেশ দিয়েছেন। শিব আমিষ ভক্ষণ করেন না। পতিপরায়ণা সতী দুর্গা শিবের উচ্ছিষ্ট প্রসাদ গ্রহণ করেন। কালীও দুর্গারই প্রকাশ মাত্র। তাঁরা মাংসভুক্ বা রক্তপিশাচী নন। কলিযুগের ধর্মভ্রষ্ট, উগ্র পিশাচগুণসম্পন্ন মানুষেরা তাদের নিজেদের তামসিকতার অনুকূলে উগ্র উলঙ্গ কালী-মূর্তির আরাধনা করে এবং মাংসলোলুপতা চরিতার্থ করতে পশুবলি দেয়। তারা কালী-দুর্গাকে বৈষ্ণবীরূপে দেখে না, তারা রক্তপায়ী মাংস-পিশাচীরূপেই দেখে।
এই হল কলির জীবের ভয়ংকর বৈষ্ণব-অপরাধ। কলিযুগে পশুবলি নিষিদ্ধ। অন্যান্য যুগে বৈদিক আচারসম্পন্ন শুদ্ধ ব্রাহ্মণগণ যজ্ঞে বৃদ্ধ পশু আহুতি দিয়ে তৎক্ষনাৎ মন্ত্রযোগে পশুর উন্নত নবজীবন দান করবার যথেষ্ট ক্ষমতা তাদের ছিল। কিন্তু কলিযুগে বৈদিক আচারভ্রষ্ট ব্রাহ্মণদের সে ক্ষমতা নেই। ভগবান শ্রীবিষ্ণুর অবতার বুদ্ধদেব জগতে পশুবলি সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ করে দিয়েছিলেন, সেই ইতিহাস সবার জানা।
মনুসংহিতায় 'মাংস' কথাটির অর্থ ব্যাখ্যাত হয়েছে 'মাম্ খাদতি ইতি মাংস' অর্থাৎ, "সেও আমাকে এইভাবে খাবে যেরূপ আমি তাকে খাচ্ছি।" "বলি দিয়ে মাংস খাওয়া ধর্মানুমোদিত মনে করে যদি কেউ মাংসাশী হয়, তবে সে স্বধর্ম ত্যাগ করে বিধর্মকেই স্বধর্ম মনে করে।" (ভাঃ ১১//১৩ বিবৃতি)
"ধর্মজ্ঞানহীন সাধুত্ব-অভিমানী দুর্জন ব্যক্তি নিঃশঙ্কচিত্তে পশুহিংসা করলে পরলোকে সেই পশুরাই ঘাতকদের অনুরূপভাবে ভক্ষণ করে থাকে।" (ভাঃ ১১//১৪)
"আর যে সব দাম্ভিক ব্যক্তি ইহলোকে দম্ভ প্রকাশ করবার জন্য যজ্ঞের অনুষ্ঠান করে এবং সেই যজ্ঞে পশু বধ করে, পরলোকে তারা 'বৈশস' নামক নরকে নিক্ষিপ্ত হয়। যমদূতগণ তাদেরকে অশেষ যাতনা দিয়ে বধ করে।" (ভাঃ ১১//২৫)
ছাগল-মহিষ-আদি বলি দিয়া পূজে॥
বৈশস-নরকে যাথে বধস্থান বলি।
নরক ভুঞ্জায়ে তারে তথা লৈঞা পেলি॥
ছাগ-মহিষের রূপ ধরি ভয়ঙ্কর।
খণ্ড খণ্ড করি তার কাটে কলেবর॥
আর্তনাদ করি কান্দে হইয়া ফাপর।
মহাশূলে তার অঙ্গ বিন্ধে নিরন্তর॥
(শ্রীকৃষ্ণপ্রেম তরঙ্গিনী //৪১-৪৪)
শ্রীমদ্ভাগবত (/২৬/৩১) শ্লোকে বলা হয়েছে_ "যারা পশুবলি দিয়ে ভৈরব বা ভদ্রকালী প্রভৃতি দেবদেবীর পূজা করে, হিংসা-কবলিত সেই পশু যমালয়ে রাক্ষস হয়ে ঘাতকের মত সুতীক্ষ্ম অস্ত্র দিয়ে তাদের বধ করে। ইহলোকে যারা পশুর রক্ত পান করে আনন্দে নৃত্যগীত করে, সেই সব হিংস্রাশ্রিত পশু সেইরূপেই পরলোকে হিংসাকারীর রক্ত পান করে আনন্দে নৃত্যগীত করতে থাকে

0 Comment "কলিযুগে পশুবলি নিষিদ্ধ?"

Post a Comment